রোগী বাড়লেও চিকিৎসার পরিধি বাড়ানোর প্রস্তুতি এক বছরেও নেয়া সম্ভব হয়নি। এর লাগাম টেনে ধরার মতো কৌশলও নেই সিলেটে। লকডাউন মানা হচ্ছে না। ফলে সংক্রমণ কমার কোনো পথই দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। আগে শহরেই ছিল করোনা সংক্রমণের সীমাবদ্ধতা। এখন গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। মৃত্যুর মিছিল চলছে। সরকারি হিসেব মতে- গতকাল সিলেটে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু করোনা উপসর্গ নিয়ে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই হিসেব রাখছে না কেউ। আইসিইউ খালি নেই। ১০ দিন আগে থেকেই এ সংকট। এখন অক্সিজেনই ভরসা। অক্সিজেন দিয়ে লড়াই চলছে করোনার সঙ্গে। হাসপাতালে রোগী বাড়লে অক্সিজেন নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে অক্সিজেন সংকটের অভিযোগ করেছেন। অক্সিজেন সংকটের কারণে তারা আইসিইউতে বেড বাড়াতে পারছেন না। স্বাস্থ্যবিভাগের তথ্য মতে- গতকাল সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ১০২৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪৪২ জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার প্রায় ৪৪ শতাংশ। নতুন রোগীদের মধ্যে সিলেট জেলার ২২৭, সুনামগঞ্জের ৫৬, মৌলভীবাজারের ৬৭ ও হবিগঞ্জ জেলার ৪৬ জন রয়েছেন। এছাড়া ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সিলেটে নতুন করে মারা গেছেন আরও ৬ জন। এর মধ্যে ৫ জনই সিলেট জেলার, অপরজন মৌলভীবাজারের। সিলেট বিভাগে এ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫১১ জনের। বর্তমানে সিলেটজুড়ে ৫৫১ জন করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিলেটে করোনা মোকাবিলায় পূর্বে থেকে যে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছিল সেই প্রস্তুতি আর কাজে আসছে না। রোগী বেড়েছে কয়েকগুণ। বিশেষ করে অক্সিজেন সাপোর্ট পেতে রোগী সংখ্যা বাড়ছেই। ফলে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে বেড়েছে ক্রিটিক্যাল রোগীর চাপ। এ হাসপাতালে প্রতি ঘণ্টায় আইসিইউর জন্য রোগী আসছে। কিন্তু ১৬টি বেডই রোগীতে পূর্ণ। এ কারণে আইসিইউতে জায়গা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে, ওয়ার্ডে সুস্থ রোগীদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে নতুন রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। ভর্তি হতে আসা খুব কম সংখ্যক রোগীকে ওয়ার্ডে ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরে দুইশ’ শয্যার একটি ওয়ার্ড প্রস্তুত করার কথা ছিল। সেন্ট্রাল অক্সিজেন না থাকার কারণে সেটিও চালু করা যাচ্ছে না। হাসপাতালের উপ-পরিচালক হিমাংশু লাল জানিয়েছেন, সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করতে একটি প্রস্তাবনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সে প্রস্তাবনা পাশ হয়ে এলে কাজ শুরু হবে। এরপর সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করা হলেই রোগী ভর্তি শুরু হবে। সিলেটের ৩১ শয্যা বিশিষ্ট খাদিমপাড়া ও দক্ষিণ সুরমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। এ দুটি হাসপাতালে সিলিন্ডার দিয়ে রোগীদের অক্সিজেন দেয়া হয়। ফলে খুব আশঙ্কাজনক রোগী না হলে ওই হাসপাতালে রাখা হয়। দুটি হাসপাতালে প্রায় ৩৫ জনের মতো রোগী ভর্তি রয়েছে। রোগী বাড়ার কারণে সিলেটের উপজেলাগুলোতেও করোনা চিকিৎসাসেবা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। কারণ, সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এসব রোগী স্থানীয়ভাবে উপজেলায় চিকিৎসা পেলে দুর্ভোগ কমে আসবে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা চালুর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।